হটাৎ নাকের ওপরে একটা গরম নিশ্বাসের অনুভব বুঝতে পারে শিলা । ঘুম ভেঙ্গে যায় শিলার।মনে হচ্ছিলো,কারো ঠোঁটের উষ্ণ নিশ্বাস নিজের ঠোঁটের ওপরে পরছে। কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে দেখে,কই কিছুইতো নেই। তাহলে এমন উষ্ণ নিশ্বাস কেন পেলাম। আসলে এসব কিছুই বাস্তব হচ্ছে না। যা হচ্ছে,তা সব মনের মধ্যে ভয়ংকর চিন্তার কারনে। সেতো আমার পাশে এখন আসছে না। তাহলে এমন উদ্ভট চিন্তা করে লাভটা কি ?.
পেটের ব্যাথাটা একটু কম কম লাগছে। একটু আগে অনেক ব্যাথা ছিলো। শিলার কেন যেন মনে হলো,সোফাতে নকিব নেই। এটা মনের মধ্যে সন্দেহ জাগলো। একটু উঠে বসতেই দেখে ,বাস্তবেই সোফাটা খালি।
কি আশ্চর্য! কোথায় গেলো সে। এখনতো নিশ্চয় অনেক রাত। বাথরুমের দরজাটাও হালকা খোলা। তাহলেতো বাথরুমে যায়নি। গেলো কোথায় তাহলে। শিলা না পারতে বিছানা থেকে উঠে পরলো।
শিলার ভাবখানা এমন,যেন তাদের সম্পর্কটা অনেক আগের। শিলার মধ্যেও এমন একটা ভাব প্রকাশ হচ্ছে। তার এখন মনেই নেই যে,সে এই বাড়ির ও নকিবের নতুন বউ।
তবে শিলা ও নকিবদের একটা কাহিনী আছে,শিলার পরিবারের সাথে নকিবের পরিবারের সম্পর্কটা অনেক দিনের। যেহেতু সম্পর্কটা পারিবারিক,তাই নকিবের সাথে শিলা ও শিলার ছোট বোনের সম্পর্কটাও বেশ দিনের।
শিলার ছোট বোনটা শিলার বেশি ছোট না। এক বছরের সম্ভবত।
নকিব শিলার ছোট বোন রিমার ওপরে খুউব আকৃষ্ট ছিলো। রিমাও অবশ্য নকিবকে খুউব চাইতো।তাদের সম্পর্কটা এক সময় মনের মধ্যে শুরু হয়। তারপর মন থেকে চলে যায় আরো গভীরে,যেখানে তারা পরবর্তি জীবনের সপ্ন তৈরী করে । কিন্তু তারা এখানেই সমপ্ত করেনি। হাত নিয়ে গেছিলো আরো গহীনে।সেই সম্পর্কটা ছিলো কামনার। যখন সম্পর্কটা দেহের সাথে হয়ে যায়,তারা নির্দ্বিধায় মিলন হতো।
তাদের এইসব কাজকর্ম শিলা একদিন দেখে ফেলে। সেইদিন তিন বন্ধুর পরিবার এক সাথে বনভোজনের আয়োজন করে।শিলা ও নকিবের পরিবার সহ অন্য একটি পরিবার।
নকিব ও রিমা সুযোগ পেয়ে একটু দূরে যায় ঘুরে আসার নাম করে। কিন্তু শিলার কাছে ব্যাপারটা ভাল মনে হয়নি। শিলা অনেক দিন ধরেই তাদের চলাফেরা সন্দেহ করছে।
শিলা সন্দেহবশত পিছু নেই তাদের। মনের মধ্যে যা ডেকেছিলো,তারা হয়ত এমন একটা কাজেই লিপ্ত হয়ে আছে। শিলাকে আড়ালে দাড়িয়ে ঠিক সেই দৃশ্যই দেখতে হয়েছে। শিলা প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনি। তারা দুজন এমন কাজ করলো কি করে।
নকিব শিলা ও রিমার দুজনের’ই বড়। শিলা নকিবের সামনে সারা জীবন নমনীয়। কোনো দিন নকিবের চোখের ওপরে চোখ তুলে তাকানোর সাহস হয়নি। নকিবকে শিলাও অনেক চাইতো। কিন্তু শিলা লাজুক বেশি ছিলো। যার কারনে নকিবের সাথে তেমন ঘেষাঘেষি করা হতো না। তবে ,শিলার মনে যদি কোনো পুরুষ সপ্নের জন্য জায়গা পেয়ে থাকে, সেই পুরুষটা নকিব।
কিন্তু মনের মানুষটা যখন চোখের সামনে এমন চরিত্র প্রকাশ করে দেই,তখন কার ভাল লাগে।
শিলারও ঠিক এই মহুর্তে পুরো শরির জ্বলছে।ইচ্ছে করছে নিজেকেই শেষ করে ফেলতে।
শিলার সমস্ত শরির কাঁপছে। এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। শিলা যে দৃশ্য দেখেছে,প্রথমিক কেও দেখলে কখনও নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারে না। শিলা তবুও দাঁত কামড়িয়ে সহ্য করে আছে।
কিন্তু আশ্চর্য হলো এটা,শিলার মনে নকিবের জন্য কোনো ঘৃনা জন্মালো না। যত রাগ ও ঘৃনা,সব ছোট বোনটার ওপরে।
শিলা রিমা দুজনে এক সাথেই পড়াশোনা করতো,ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ। কিন্তু রিমার পড়াশোনার তেমন একটা আগ্রহ ছিলোনা। তার ইচ্ছা,সে আর কয়েকদিন পরে বিয়ে করে সংসার শুরু করবে ।
কিন্তু ,রিমা কখনও মুখ ফুটে বলতে পারতো না যে,সে নকিবকে বিয়ে করবে।
রিমার মাও এমন একটা পরিকল্পনা করছিলো। রিমার পড়া যখন হচ্ছেইনা,তখন ভাল ঘরের একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে। রিমা তখন মুখ ফসকে বলে দিয়েছিলো,নকিবকে সে বিয়ে করবে। কিন্তু রিমার বাবা সেটা করতে রাজি না। নকিব এখনও ছাত্র,সে আর কয়েকদিন পরে বিদেশে যেয়ে পড়াশোনা শেষ করে আসবে।তারপর ,অনেক বড় কিছু একটা করবে। তার সাথেতো রিমার মিলে না।
রিমার বাবা অবশ্য অন্য কোনো চিন্তা করে রেখেছে,সেই জন্য রিমার সাথে নকিবকে দিতে রাজি না। ইন্টার শেষে রিমা ঘরের কাজ শিখতে থাকলো,আর এদিকে শিলার ডাক্তারিতে চান্স হয়ে গেলো।
একদিন সকাল বেলায় রিমা খুউব বমি করলো। এ কথা শিলা জেনে গেলেও বাসার বাকি লোকরা জানলো না। শিলার সন্দেহ হলো,রিমা প্রেগনেন্ট হয়ে গেলো নাতো। আসলে সন্দেহ টা ভুল ছিলো না। রিমা না পারতে সব শিকার করে ফেলে বড় বোন শিলার কাছে।
রিমা এমন একটা পরিস্থিতিতে পরেছে,এটা যদি বাসার কেও জানে,তাহলে অনেক বড় কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। শিলা একটা কৌশলে রিমার অবস্থাটা চাপিয়ে দিলো।
কিন্তু ,দুদিনের মাথায় রিমা বাড়ি থেকে উধাও। রিমার নিখোঁজ সংবাদটা বেশ টানাপোড়া শুরু করলো নকিব ও শিলার পরিবারের। কারন,রিমার বাবা মা বুক ফুলিয়ে বলছে,নকিব ও রিমা,তার এক সাথেই পালিয়েছে।
এই কথার ফেরৎ উত্তরটা নকিবের বাবা মা দিতে পারছে না। কারন ,সেই দিন নকিব তার বাবার কাছে বেশ কিছু টাকা নিয়ে রাঙ্গামাটি ট্যুরে গেছে। বলেছে বন্ধুদের নিয়ে যাচ্ছে। এখন,সাথে রিমাও আছে কিনা কে জানে।
কিন্তু,তার একদিন পরে খবর আসে,বুড়িগঙ্গায় একটা মেয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে। সেটা রিমার লাশ ছিলো। লাশটা ভালমত দেখা ও পরিক্ষা করার সাহস কারো ছিলো না। কারন,লাশের বিভিন্ন অঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে,তবুও একটা রিপোর্ট ডাক্তাররা তুলে ধরে,লাশটি ধর্ষনের।
তারপরের রহস্য গুলো এখনও উদ্ধার হয়নি।
শিলা বারান্দায় গিয়ে দেখে,নকিব দাড়িয়ে থেকে চাঁদ দেখছে। শিলাকে দেখে নকিব চোখ ফিরিয়ে নিলো,চাঁদের দিক থেকে।
একি,তুমি ঘুমোওনি,হুম,ঘুমিয়েছিলাম,কিন্তু হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। আপনি যেগে আছেন কেন।
কি করবো,তুমিতো বাসর রাতটাই মাটি করে দিয়েছো,তাই দাঁড়িয়ে থেকে চাঁদ উপভোগ করছিলাম।
আমি আবার আপনার বাসর কি করে মাটি করলাম। কি করে করোনি,এই দিনে যার বউয়ের পেট ব্যাথা হয়,তার কি সোনা দিয়ে জড়ানো রাত?
আসলে,আপনি ভুল ধারনা করেছিলেন,আজতো মাত্র আট তারিখ। আমার সকাল থেকেই পেটে সমস্যা করছিলো। মাকে বলেছিলাম পেট ব্যথার কথা। মা পরে ঘরে ঢোকার আগে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো। এখনতো সব ভাল।
তাহলে তখন বললে না কেন ?
তখন আপনার কথা শুনে লজ্জা পেয়েছিলাম,তাই আর কিছু বলতে পারিনি। শিলার কথা শেষ হওয়ার পরে নকিব আচমকা একটা টান দেয়। শিলাকে নিজের শরিরের সাথে আটকিয়ে ফেলে। শিলা একটা মানব মুর্তি হয়ে যায়। চোখটা আটকিয়ে যায় নকিবের চেখের কাছে।
কিছুক্ষনের জন্য শিলার কাছে চারিদিকটা একটা নিস্তব্দ খেলনা হয়ে গেলো। এই প্রথম তার সপ্ন পুরুষটা তাকে এভাবে আটকিয়ে ধরলো। মনে হচ্ছে,বুকের সাথে পিষে ফেলবে।
নকিব নিজের মুখটা শিলার কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিস ফিস শব্দে বললো,তোমাকে সামনে নিয়ে চাঁদ উপভোগ করতে চাই। তোমাকে পেছন থেকে ধরতে চাই।
কিন্তু শিলার মুখ দিয়ে কোনো কথা যেন বাহির হলনা। শিলাকে সামনে নিয়ে নকিব পেছন থেকে খুউব জোরে চেপে ধরলো। জোরে চেপে ধরার পরে,শিলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো। মনে হলো,কতদিন পরে শ্বাসটা ত্যাগ করছে।
শিলার চেখটা বন্ধ,চোখ বন্ধ করেই নকিবের আদর উপভোগ করছে শিলা।
নকিব,শিলার চুল ভেদ করে নাকটা নিয়ে গেলো শিলার গালের কাছে। উষ্ণ তাপে শিলাকে অজ্ঞান করে দিচ্ছে। নকিবের হাতটা ঘুরে ফিরছে শিলার শরিরের বিভিন্ন আংশে। শিলা মনে হচ্ছে নিজেকে নকিবের ওপরে ছেড়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় নিজেকে কি ধরে রাখা যায়?
শিলা বুঝতে পারে,নকিবের ঠোঁটের উষ্ণ তাপটা তার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে। নাকের কাছে অনুভব করতে পারে উষ্ণ একটি নিশ্বাস।
কিন্তু শিলার ঠোঁটের কাছে এসে,নকিবের ঠোঁট টা থেমে যায়। আটকিয়ে যায় গালের কাছে।