ফারুক হোসেন,পাবনা প্রতিনিধিঃ কমছে পানি, বাড়ছে শঙ্কা, উৎকন্ঠা। কখন ঝড়ে রক্ত। কে হবে পিতা হারা। কে হারাবে স্বামী। কোন মায়ের বুক ফাঁটা আর্তনাদ বুকে এসে বিধবে তা আল্লাহ ভাল জানেন। পাবনার দুই উপজেলার (সাঁথিয়া-আটঘরিয়া) সীমানার উপর দিয়ে প্রবাহিত একটি বিল যার নাম জলকর বিল। এই বিলের জলমহল ইজারা নিয়ে ইজারাদার ও গ্রামবাসীর মধ্যে গেল সোমবার মাছ মারা নিয়ে হাতাহাতি হয়। এতে আহতও হয় উভয় পক্ষের কয়েকজন। মঙ্গলবার সকালে আবারও বিলজলকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সৌখিন মৎস্য শিকারীরা পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামলে কাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় মতিন গং এর লোকজনের বাধায় ফিরে যায় মাছ শিকারিরা। এ নিয়ে উভয় পাড়ের মানুষের মাঝে চলছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এটার মিমাংসা না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছে এলাকাবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাঁথিয়া উপজেলার স্বরগ্রাম মৌজা ও আটঘরিয়া উপজেলার বিল জলকর, দোলামপুর, গারুলিয়া, মঙ্গলগ্রাম মৌজার ১নং খতিয়ান ভূক্ত ১৫টি দাগে প্রায় ১০৪ একর ভূমি নিয়ে এই বিল। শীতকাল থেকে বিলের পানি কমতে শুরু করে। আর পানি কমার সাথে সাথে মৎস্যজীবির ব্যানারে স্বার্থন্নেষী মহল মাছ ধরার জন্য প্রস্তুত হয়। তেঁতিয়ে উঠে বিলপাড়ের উভয় পক্ষের মানুষ। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জন প্রতিনিধিরা নড়ে চড়ে বসেন। চোখ কান খোলা রাখেন। বিগত দিনগুলোয় বিল জলকরের মাছ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। গতবছর ঊভয় পাড়ের মানুষের সংঘর্ষে চলে গেছে ৩টি তাজা প্রাণ। আহত হয়েছিল আরও ২০/২৫জন। এলাকাবাসী দেখেছে তখন অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। সন্ত্রাসী কাজে সহায়তা যোগান দাতারা পর্দার আড়ালে থেকে আগুনে ঘি ঢালছে। এলাকাটি রেডজোন নামে অধ্যুষিত। জানাগেছে, গত ১১/০৬/২০১৮ইং তারিখে পাবনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আটঘরিয়া উপজেলার যাত্রাপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি আব্দুল মতিন এর নামে টি.এম কেস নং ১২ ভূক্ত গারুলিয়া জলমহলের ১নং খতিয়ানে বিল জলকা মৌজার ৭টি দাগে ৪৭.৫৩ একর, দোলামপুর মৌজা ২ দাগে ২.৯৫ একর, গারুলিয়া মৌজার ১ দাগে ০.৮৯ একর, মঙ্গলগ্রাম মৌজার ২ দাগে ১.৫০ একর মোট ৫২.৮৭ একর জলমহল লীজ বা দখল নামা পত্র দেন আগামী ১৪২৫/১৪২৭সন বাংলা পর্যন্ত । অপরদিকে বিলজলকর জলমহলে সাঁথিয়া উপজেলার স্বরগ্রাম মৌজার ১নং খতিয়ানে ৫৮৩ দাগে ২৪.৭০ একর ১নং দাগে ২৪.৭০ একর ৫৩ দাগে ১.৪৫ একর মোট ৫০.৮৫ একর। আঃ মতিন গং ৫২.৮৭ একর লীজ নিয়ে সাঁথিয়া ৫০.৮৭ একর মোট ১০৩.৭২ একর ভূমি জলকর জোড় পূর্বক ভোগ দখলের পায়তারা করছেন বলে স্বরগ্রামসহ আশপাশের প্রান্তিক মৎস্যজীবিরা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, আমরা সাঁথিয়া অংশ জমি বাদ দিয়ে মাছ ধরার অনুরোধ করলে আব্দুল মতিনসহ তার সাঙ্গঁপাঙ্গরা অস্বীকার করে। এমনকি কয়েক জন মৎস্যচাষীকে মারপিটে আহত করে। এতে জলমহলের দুই পারের বাতাস গরম হয়ে উঠছে। যে কোন সময় জীবন নাশের মত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। এ দিকে সাঁথিয়া উপজেলার আর-আতাইকুলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোস্তফা শামীম জানান, ভুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের স্বরগ্রাম মৌজার উক্ত ৩ দাগে ৫০.৮৫ একর জমি সায়রাত ভূক্তকরণের জন্য পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেন। আর.এস খতিয়ান সূত্রে দেখা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার স্বরগ্রাম মৌজা ও আটঘরিয়া উপজেলা দোলামপুর মৌজার মধ্যে হারাহারি (আধাআদি) রের্কড ভূক্ত হয়। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাঁথিয়া অংশে লাল কালি ও আটঘরিয়ার অংশে সবুজ কালি চিহ্নিত করে স্কেচম্যাপ তৈরী করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে সাঁথিয়া স্বরগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ জানান, মতিন গংরা যেটুকু লীজ নিয়েছে সেটুকু আটঘরিয়া অংশে। কিন্তু তারা সাঁথিয়ার অংশ অবৈধভাবে ভোগদখল করছে। তিনি আরও বলেন, বিল পাড়ের শান্তি প্রিয় মানুষেরা তাদের স্বজন হারাতে চান না। তারা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।